দেশে বিদেশে নাম ছড়াচ্ছে মৌলভী বাজারের আনারস, কাঁঠাল!

পাহাড়, টিলা বেষ্টিত পর্যটন জেলা মৌলভীবাজার। এ
জেলায় একদিকে যেমন আছে বিস্তীর্ণ সমভূমি তেমনি
অপরদিকে রয়েছে হাওর, চা বাগান, টিলাভূমি। এসব
জায়গায় প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় নানা জাতের ফলমূল।
এরমধ্যে মৌলভীবাজারের আনারস, কাঁঠালসহ বেশকিছু
ফলের চাহিদা এখন দেশজুড়ে। মৌলভীবাজার, সিলেট
ছাড়িয়ে এসব ফল এখন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের
জেলা-উপজেলায়।

সরেজমিনে মাঠ পর্যায়ে ফলের বাজারগুলো ঘুরে জানা যায়,
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি প্রচুর
পরিমাণে বাইরের জেলা উপজেলার ক্রেতারাও মৌলভীবাজার
থেকে ফলমূল কিনে নিচ্ছেন। বিশেষ করে বর্ষিজোড়া পাহাড়
থেকে আসা পাহাড়ি কাঁঠাল, শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলার
টিলাভূমিতে উৎপাদিত আনারস দেশ জুড়ে খ্যাতি পেয়েছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। এ বছর জেলার প্রায় ২ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৬০০ টন। চাহিদা বাড়ায় চায়ের মতোই জেলার সদর উপজেলার শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের পাহাড়ি টিলাগুলোতে আনারস বাগান গড়ে উঠছে।

জেলার বিভিন্ন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে,
গরমের কারণে আনারসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় গত এপ্রিল
থেকে এ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে প্রায় কোটি টাকার আনারস কেনাবেচা হয়েছে। বাজারে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার আনারস কেনাবেচা হয়। আকার অনুযায়ী প্রতিটি বড় আনারস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি ২০ থেকে ৩০ টাকা, ছোট আকারের আনারস ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। মৌলভীবাজার পৌর শহর এলাকার কোর্ট মার্কেটের ফলের বাজারে গিয়ে জানা যায়, এখানকার পাহাড়ি কাঁঠালের ব্যাপারে।

ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানান, বর্ষিজোড়ার বনাঞ্চলসহ স্থানীয়
এলাকা থেকে আসা কাঁঠালের চাহিদা এ বাজারে ব্যাপক
আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আম-কাঠালি পাঠানোর সময় এ
বাজারের কাঁঠাল থাকে চাহিদার শীর্ষে। রসালো এবং আকারে
বড় খোসা হওয়ায় এসব কাঁঠালের স্বাদও সুস্বাদু বলে জানান
বিক্রেতারা।

রাজশাহীর আম বিখ্যাত। তবে এই জেলারই বাসিন্দা সাকিব
জামান প্রায় প্রতিবছর নিয়ম করে মৌলভীবাজার থেকে আনারস কাঁঠাল কিনে নিয়ে যান। বড় ভাইয়ের চাকরি সূত্রে এখানে থাকাকালীন শ্রীমঙ্গলের আনারস ও মৌলভীবাজারের কাঁঠালের সুনাম সম্পর্কে তিনিও জানেন।

সাকিব জামান বলেন, আগে আমার বড় ভাই মৌলভীবাজার
থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় এখানকার আনারস নিয়ে যেতেন।
কখনো কখনো কোরিয়ারে করে কাঁঠাল পাঠাতেন। এখানকার
ফলের স্বাদ অন্য জায়গায় তুলনায় অনেক ভালো। এখন আমি ও ভাইয়ের মতো বছরে ফলের সিজনে এখান থেকে আনারস নেইকোরিয়ারে করে।

মৌলভীবাজারের ফলমূল এখন যায় প্রবাসেও। প্রবাসী জেলা
মৌলভীবাজারের অনেক প্রবাসীর আত্মীয়-পরিবারের সদস্যরা
প্রিয়জনদের জন্য ফল কিনে প্যাকেট করে পাঠান। স্থানীয়
আনারস, লেবু, কাঁঠালসহ অনেক ধরনের ফলই বিদেশের
মাটিতে বসেই খেতে পারেন প্রবাসীরা।
মৌলভীবাজারের ফলমূলের চাহিদা বাড়লেও ব্যবসায়ী ও ফল
চাষীরা জানিয়েছেন কিছু সমস্যার কথাও।

বিশেষ করে, সরকারি বা বেসরকারি কোনো হিমাগার না থাকায় বেশিরভাগ সময়ই উচ্ছিষ্ট ফলমূল পচে গিয়ে নষ্ট হয়। হিমাগার বা ফল সংগ্রহ করার জন্য ব্যবস্থা থাকলে ফলের পচন কমানো যেতো। শ্রীমঙ্গলের আনারস চাষী মো. ইউনুস খান বলেন, ‘এ মৌসুমে আনারসের ভালো ফলন হয়েছে। প্রতিটি বড় আনারস ৫০ টাকায় এবং ছোট আনারস ২০ টাকায় বিক্রি করেছি। ন্যায্য দামে আনারস বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। অপর চাষি বিজ্ঞাল মিয়া বলেন, ‘যখন আনারস একসঙ্গে পাকতে শুরু করে তখন সংরক্ষণের অভাবে অনেক আনারস পচে নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য এখানে একটি হিমাগার বানানো দরকার।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল সূত্রধর
বলেন, ‘অনেক কৃষক আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন,
আনারস পচে নষ্ট হয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আনারস
সংরক্ষণের জন্য শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপন জরুরি।
কৃষকদের আমরা বলেছি, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে
শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি
পাঠিয়েছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক সামসুদ্দিন
আহমদ বলেন, মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। এবছর জেলার প্রায় ২ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আনারসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়াহয়েছে।

Leave a Comment